প্রিন্সিপালের বাণী
لحمد لله وحده والصلاة والسلام علي من لا نبي بعده اما بعد
ভূমিকা : শিক্ষক-ছাত্র ও অভিভাবক মিলেই প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানের ইমারত কথা বলে না। কথা বলেন শিক্ষক। অতএব যোগ্য শিক্ষক ব্যতীত যোগ্য শিক্ষার্থী গড়ে উঠতে পারে না। নরম মাটি যেভাবে কারিগরের হাতে সুন্দর হাড়ি-পাতিলে পরিণত হয়, নরম শিশুগুলি তেমনি সুন্দর ও চরিত্রবান শিক্ষকের হাতে সুন্দর মানুষে পরিণত হয়। তাই যেখানে শিক্ষক সুন্দর, সেখানে শিক্ষার্থীরা সুন্দর রূপে গড়ে ওঠে ও সমাজে প্রশংসিত হয়। সাথে সাথে সেই প্রতিষ্ঠান সুনাম করে। শিক্ষকরা শিক্ষার্থী গড়েন ও নেতারা জাতি গড়েন। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) ছিলেন উম্মতে মুহাম্মাদীর শিক্ষক।
সুশিক্ষা আদর্শ জাতির মেরুদন্ড :
শিক্ষা হ’ল জাতির মেরুদন্ড। যা জাতিকে খাড়া রাখে এবং পড়ন্ত অবস্থা থেকে উঠিয়ে দাঁড় করায়। এটা তখনই সম্ভব যখন ঐ শিক্ষা হবে আল্লাহ নির্দেশিত পথে। যদি এর বিপরীত হয়, তাহ’লে ঘুণে ধরা বাঁশের মত জাতির মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়বে। আজকের পৃথিবীতে বড় বড় অশান্তির মূল কারণ হ’ল শিক্ষিত নেতৃবৃন্দ। তাদের শিক্ষায় আল্লাহভীরুতা নেই, আখেরাতে জবাবদিহিতা নেই। স্রেফ রয়েছে দুনিয়া সর্বস্বতা। আর তাই দুনিয়া নামক মৃত লাশের উপরে ক্ষুধার্ত শকুনের মত দুনিয়াবী শিক্ষায় শিক্ষিত লোকগুলি ভদ্রবেশে সকল প্রকার শয়তানী অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসলামী শিক্ষা কি ও কেন?
আল্লাহ নির্দেশিত শিক্ষাকে ‘ইসলামী শিক্ষা’ বলা হয়। যার ভিত্তি হ’ল তাওহীদ, রিসালাত ও আখেরাত বিশ্বাসের উপরে। যা উচ্চ নৈতিকতা সম্পন্ন, নির্লোভ, সৎ ও যোগ্য দেশপ্রেমিক জনশক্তি তৈরী করে। এই শিক্ষা মানুষের জীবনকে খন্ডিত নয়, বরং একটি অবিচ্ছিন্ন জীবন হিসাবে গণ্য করে। মানুষের ধর্মীয় ও বৈষয়িক জীবনকে আল্লাহর রঙে রঞ্জিত করে। যা মানুষের হাত-পা, মনন ও মস্তিষ্ক সবকিছুকে আল্লাহর অনুগত বানিয়ে থাকে। ফলে জীবনের প্রতি পদক্ষেপে শয়তানের বিরুদ্ধে তার যুদ্ধ চলে। কেননা শয়তান সর্বদা পৃথিবীতে বিশৃংখলা ও অশান্তি সৃষ্টি করতে চায়। অথচ ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তি সর্বদা পৃথিবীকে সুন্দরভাবে আবাদ করতে চায়। অতএব দেশে প্রচলিত ধর্মীয় ও সাধারণ শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বিমুখী ধারাকে সমন্বিত করে কুরআন ও সুন্নাহ ভিত্তিক একক ও পূর্ণাঙ্গ ইসলামী শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করাই হ’ল যেকোন সমাজদরদী সরকারের মৌলিক কর্তব্য। আর সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশের সরকার হিসাবে এটি তাদের জন্য অপরিহার্য।
আমাদের শিক্ষা কার্যক্রমের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য :
১. পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছের আলোকে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার বিস্তার ঘটানো এবং এর মাধ্যমে প্রকৃত ইসলামী শিক্ষায় সুশিক্ষিত দেশ ও জাতি গঠন করা। সর্বোপরি জ্ঞান বিস্তারের শারঈ নির্দেশ পালনের মাধ্যমে মহান আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি অর্জন করা।
২. শিরক-বিদ‘আত এবং যাবতীয় কুসংস্কার ও বাতিল আক্বীদা-আমল থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করা এবং সালাফে ছালেহীনের মানহাজ অনুযায়ী ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ময়দানে ইসলামের সঠিক শিক্ষা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য উপযুক্ত কারিকুলাম ও পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন করা।
৩. শিক্ষার্থীদেরকে মেধাবী ও ইখলাছপূর্ণ যোগ্য আলেম ও দাঈ ইলাল্লাহ তৈরী করা এবং যুগোপযোগী মানবসম্পদে পরিণত করা।
৪. একমুখী শিক্ষাধারা প্রবর্তনের লক্ষ্যে আরবী ও ইসলামী শিক্ষাকে প্রাধান্য দিয়ে ৮ম শ্রেণী পর্যন্ত একই সিলেবাসে পাঠদান অতঃপর মেধা ও আগ্রহের ভিত্তিতে মানবিক, বিজ্ঞান, কারিগরী প্রভৃতি শাখায় পৃথক পাঠ গ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৫. শিক্ষার সকল স্তরে শুদ্ধভাবে কুরআন পঠন ও অনুধাবনের ব্যবস্থা চালু করা এবং এর সাথে বাংলা, ইংরেজী, আরবী, উর্দূ ভাষাসহ শিক্ষার সার্বিক মানোন্নয়ন ঘটানো। আমরা বিশ্বাস করি, আল্লাহর রহমতে এই শিক্ষা সংস্কার আন্দোলন একদিন পূর্ণাঙ্গ সমাজ সংস্কার আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ। সুতরাং দেশে বা বিদেশে অবস্থানরত শিক্ষানুরাগী সচেতন মহলের প্রতি আমাদের আহ্বান থাকবে, পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ ভিত্তিক বিশুদ্ধ ইসলামী শিক্ষার অগ্রযাত্রায় অত্র মাদ্রাসার শিক্ষা কার্যক্রমকে এগিয়ে নেয়ার জন্য সার্বিকভাবে সহযোগিতা করুন এবং আগামী প্রজন্মকে যথাযথভাবে সুশিক্ষিত করার সংগ্রামকে সফল করুন। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!